ফার্নিচার রপ্তানি বাড়াতে বস্ত্র খাতের মতো বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ফার্নিচার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন।

বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় এ দাবি জানান ফার্নিচার ব্যবসায়ীরা।

এনবিআর সদস্য মো. মাসুদ সাদিকের সভাপতিত্বে প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিপিজিএমইএ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ ফার্নিচার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ কয়েকটি খাতের উদ্যোক্তারা অংশ নেন। সভায় ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ছাড়াও এনবিআর সদস্য (ভ্যাট নীতি) জাকিয়া সুলতানা এবং সদস্য (আয়কর নীতি) সামসুদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

প্রাক-বাজেট আলোচনায় বাংলাদেশ ফার্নিচার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আকতারুজ্জামান বলেন, ‘ফার্নিচার শিল্পে বিনিয়োগ হচ্ছে। অনেক পণ্য বিদেশে রপ্তানির সুযোগ থাকলেও বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধা না থাকায় তা হচ্ছে না। এর ফলে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে এ খাতের রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধার দাবি জানাচ্ছি।’

এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর সদস্য মো. মাসুদ সাদিক বলেন, ‘পোশাক খাত হচ্ছে শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্প। পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা এনবিআরের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রেখে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছে। সুবিধা দিলে যদি রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব হয়, তাহলে আমরা আপনাদের প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখব।’

বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতির চেয়ারম্যান সেলিম এইচ রহমান বলেন, ‘দুই বছরের বেশি সময় ধরে কোভিড-১৯ মহামারির অভিঘাতে বিশ্বব্যাপী কাঁচামালের দাম এবং পরিবহন ব্যয় ব্যাপক বেড়েছে। এ কারণে এ শিল্প চাপে পড়েছে। এই চাপ থেকে বের হয়ে আসার জন্য কাঁচামাল আমদানির ওপর থেকে সম্পূরক শুল্ক ও রেগুলেটরি ডিউটি প্রত্যাহার করতে হবে।’ এ সময় তিনি ৫ শতাংশ অগ্রিম কর ৩ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাবও তুলে ধরেন রাজস্ব বোর্ডের কাছে।

প্রাক-বাজেট আলোচনায় পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য রিসাইক্লিং দানা থেকে উৎপাদিত পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিপিজিএমইএ। এছাড়া, দেশে শিশু খেলনা তৈরীতে ব্যবহৃত ব্যাটারি, কানেক্টর, স্টিকার পেপার এবং গিয়ার বক্সসহ খেলনা তৈরির সরঞ্জামের ওপর থেকে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানায় সংগঠনটি।

বিপিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট শামীম আহমেদ বলেন, ‘প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে রিসাইক্লিং করে দানা তৈরী করা হয়। পরিবেশের স্বার্থে এ উৎপাদনের ওপর সরকার কোনো ধরনের আয়কর ও ভ্যাট আরোপ করে না। কিন্তু, এ দানা থেকে উৎপাদিত প্লাস্টিক পণ্যের ওপর সরকার ১৫ শতাংশ ভ্যাট নিচ্ছে। পরিবেশ রক্ষায় ওই ভ্যাট আগামী ১০ বছরের জন্য প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ খাতের অন্যতম প্রধান কাঁচামাল পলিইথিলিন দিয়ে হাজার রকমের পণ্য তৈরী হয়, যা পণ্যের মোড়কজাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, সরকার এ গুরুত্বপূর্ণ পণ্যটির ওপর নতুন করে ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করেছে। এ শুল্ক সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা দরকার।’

বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মো. মোয়াজ্জেম হোসেন মতি বলেন, ‘পোশাক খাতে উৎপাদন ও রপ্তানিতে করপোরেট কর নেওয়া হয় ১২ শতাংশ। আবার গ্রিন কারখানা হলে নেওয়া হয় মাত্র ১০ শতাংশ। কিন্তু গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো শতভাগ রপ্তানি করলেও এ খাতে করপোরেট কর এখনো ৩০ শতাংশ দিতে হয়। আগামী বাজেটে এ খাতের কর ১২ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। এ খাতের উৎসে কর শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ বহাল রাখতে হবে।